কীর্ত্তনীয়াদের আচরণ এত নোংরা
কীর্ত্তনীয়াদের আচরণ এত নোংরা
কীর্ত্তনীয়াদের আচরণ এত নোংরা : Hands up..... অর্থাৎ আত্ম-সমর্পন করার আদেশ। আমরা এই কথাটার সাথে বহুল পরিচিত। যাত্রা সিনেমাতে প্রায় শোনা যায় এই ডায়লগ আর তারপর একটা রোমাঞ্চকর আত্মতৃপ্তি বিরাজ করে সবার মধ্যে।
কিন্তু এখানে আসে বিরক্তি । ....................................
জায়গাটা হলো কীর্ত্তনের আসর। কীর্ত্তনীয়ারা পনের মিনিট অন্তর ভক্ত দর্শকদের হ্যান্ডস আপ করতে বলেন মানে হাত তুলতে বলেন।
হাত না তুললে ভদ্র ভাষায় গালাগালি। ...........................
এই আত্মসমর্পন দুই ভাবে হয়। পুলিশ অপরাধীকে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য করে আর ভক্ত ভগবানের পায়ে নিজের ইচ্ছায় নিজেকে সঁপে দেয়। কারুর কথায় কেউ ভগবানের পায়ে সমর্পিত হয় না, ভব-যন্ত্রনা আর আত্ম-গ্লানিতে জর্জরিত হয়ে মানুষ আপন গতিতে ঈশ্বর এর কাছে যায়। কীর্তনীয়ারা তার অনুপ্রচেষ্টক মাত্র , এর বেশি নয়।
একটা ছোট পৌরাণিক ঘটনার কথা মনে পড়ে । ভগবান শিবের সঙ্গে ( শিব ও সতীর বিবাহের পর) প্রথম দেখা হয়েছিল প্রজাপতি দক্ষের। দক্ষ ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলেন কারন শিব - দক্ষকে অভিবাদন করেন নি। তখন শিব সে কথা জেনেও নিশ্চল ছিলেন।
পরে শিব বলেছিলো ----- তিনি দক্ষ কে মনের অভিব্যাক্তি দিয়ে অভিবাদন করেছিল দক্ষ তা বুঝতে পারেনি। দক্ষ কীর্ত্তনীয়াদের বোঝা উচিত সবাই সমান ভঙ্গিতে ঈশ্বরের পায়ে আত্মসমর্পন করে না , প্রত্যেকটা ভক্তের ভিন্ন ভিন্ন ধারা বা ভাব থাকতে পারে সেটা কীর্তনীয়ার সাথে নাও মিলতে পারে। তার জন্য ( হাত না তোলার জন্য ) পশু হয়ে জন্মাবে এ কথাটা আমার মনে হয় ঠিক নয়।
কীর্ত্তনীয়াদের কাছে আমার একটা খুব স্পস্ট একটা প্রশ্ন। ..............'' আমরা দর্শকরা স্টেজে আপনাদের কি ভাববো ? শিল্পী , বৈষ্ণব ,আচার্য্য নাকি শিক্ষক ? আপনাদের চিন্তা ধারা ঠিক করে আসরে নামুন তাতে কীর্ত্তনের (আপনাদের পেশার) মঙ্গল হবে , সমাজের মঙ্গল হবে।
এখন আপনাদের দ্বি-চারিতার একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ...................................
দীনকৃষ্ণ ঠাকুর নামে এক কীর্ত্তনীয়া (বাংলা ১৪২৫ সালে ) এক আসরে বললেন '' কোনো বাবা-মা যদি অসৎ হয় তবুও বাবা-মার অন্যায় আদেশ কোনো ভাবে সন্তান অমান্য করতে পারবে না। খুব ভালো কথা কিন্তু মুশকিল হলো সব সন্তান তো ভালো নয় , ভালো মন্দ দুটোই আছে। ভালোর কথা ছাড়ছি কিন্তু যারা খারাপ , তারা তো একদিন বাবা হবে, তারা তো একদিন মা হবে। শাস্ত্রে বলে 'মলে স্বভাব যায় না', তারা বয়সে বড় হবে বলে , সন্তানের মা-বাবা হবে বলে বদমায়েশ হবে না এমন গ্যারান্টি কি কেউ দেবে ? সন্তানের বাবা মা হলে যদি সবাই সৎ হতো তাহলে আপনাদের পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর কোনো প্রয়োজন হতো না। ক্রাইম ক্রিয়েট হতো না।
এইরকম কোনো বাবা - মা একদিন সন্তানকে ডেকে, তাদের পথ অনুসরণ করতে উপদেশ দিল। তারা অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে বড় করেছে , মা বুকের দুধ খাইয়েছে , অতএব মাতৃ - পিতৃ ঋণ শোধ করার জন্য অ-সামাজিক অপরাধ মূলক কাজ করতে হবে , সন্তানের কাছে আর অন্য option নেই।
কথাটা যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে আমি আমার কান ধরে এমন উদাহরণ দিতে পারি।অবশ্য সেক্ষেত্রে কীর্তনীয়া রাধাপদ ঘোষ মহাশয় বললেন যত তাড়াতাড়ি পারা যায় ওই বাবা-মাকে ত্যাগ করা উচিৎ , শাস্ত্রে এমন নির্দেশ আছে।
স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক এর তাত্বিক বিষয়টি কি ? কিসের ভিত্তি তে এই সম্পর্ক দাঁড়িয়ে আছে ?
* ভক্ত - ভগবানের অর্থাৎ স্বামী ভগবান ও স্ত্রী ভক্ত।
* প্রভু - দাসীর অর্থাৎ স্বামী প্রভু ও স্ত্রী দাসী।
* অথবা স্বামী স্ত্রী বন্ধুত্বর সম্পর্ক।
ভগবান হওয়া যেমন কঠিন ভক্ত হওয়া ও ঠিক তেমন কঠিন , বর্তমান সমাজে এই ভিত্তিতে দাম্পত্য জীবন কখন ও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় কি?
প্রভু আর দাসীর সম্পর্ক এটা আজ ও চলছে আর তাই চলছে বধূ নির্যাতন , বধূ হত্যার মতো মধ্য যুগীয় পাশবিকতা। তারই ফলশ্রূতিতে নারী আজ বিদ্রোহীনি। প্রেক্ষাপট ইতিহাসটা ভাবুন তাহলেই বোঝা যাবে। হাজার হাজার শিশু কন্যারা দেখছে তাদের মায়েরা অকথ্য নির্যাতন সহ্য করেছে , মায়েদের খেতে দেওয়া হয়নি ,হয়তোবা পিটিয়ে মারা হয়েছে। নয়তবা যারা বেচেঁ আছে তারা শুধু ঘোমটার আড়ালে জীবনের ফসিল মাত্র। তাই তারা শিক্ষার হাত ধরে দাসত্বের শৃঙ্খল ছেরে বেরিয়েছে। নারী স্বাধীনতাকে সবাই সমর্থন করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী স্বৈরাচারী এটা মানতে হবে, কিন্তু স্বামী - স্ত্রী সম্পর্কে দাসত্বের চিহ্ন মাত্র থাকা উচিত কি ?
একটি উচ্চপদস্থ মহিলা পুলিশ অফিসার আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি তার স্বামীকে আজও বন্ধু বলে মনে করেন। বন্ধুকে নাম ধরে ডাকাটা কি অন্যায় ?
তার প্রাসাদ - অনুপম বাড়িতে লক্ষীমাতার আশীর্বাদে ভরা , তিনি গোময় মেশানো জল কোথায় ছড়াবেন ? তিনি বাসীর ভাগ সময় নাইট ডিউটি করেন সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হয় এটা কি তার অপরাধ ?
সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই সব দায়িত্ত্বশীল অফিসার দের কুর্নিশ করে , আর মাননীয় - মাননীয়া কীর্তনীয়াগন স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করে নিজেদের 'সংকীর্ণতার ব্যাধিকে' সংকীর্তনের মাধ্যমে সকলের উপর চালিয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া গোময় জল নিয়ে এতো আহ্লাদিত হবেন না , ভূ-খন্দের চরিত্র বদলাচ্ছে। অনেকে বলছে গোবরের মধ্যে কোনো ভাইরাস থাকতে পারে, আর না থাকলে ও কৃমি থাকতে পারে।
আপনাদের নিরামিষ - বিলাসিতার কথা না বলে শেষ করতে পারছি না। আসরে কঠিন ভাষায় সবাইকে আমীষ খেতে নিষেধ করে , আর কীর্তনীয়ার গাড়িতে উঠে লুচি আর কষা মাংস খাওয়ার দৃশ্য আমি আজ ও ভুলতে পারিনি।
আজ যারা কীর্তন শুনছে তাদের মধ্যে নব্বই ভাগ অশিক্ষিত বা অর্ধ - শিক্ষিত , তারা দুহাত তুলে আপনাদের সমর্থন করছে কিন্তু মনে রাখা দরকার আগামী দিনে অ-শিক্ষা নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে (এটা বাংলা মানুষের শপথ ) কাদের নিয়ে কীর্তন করবেন প্রভু ?
কীর্তন বাংলার প্রাচীন সংস্কৃত ; আমি একজন কীর্তন ভক্ত , এই প্রাচীন সংস্কৃত কে এভাবে দায়িত্ত্ব নিয়ে শেষ করবেন না। একটু ভাবুন। প্রশ্ন গুলো কিন্তু pending.
লেখক :- দেবদাস চক্রবর্তী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
1 মন্তব্যসমূহ
সবাই নিজের মতামত জানিও কিন্তু
উত্তরমুছুনplease do not enter any spam link in the comment box.