kali puja 2020 - কালীপূজা 2020


                            kali puja 2020 -  কালীপূজা 2020

                                           কালীপূজা 




                             দুর্গাপূজার পর, kali puja 2020 - কালীপূজা 2020 বাঙালির আর এক বৃহত্তর উৎসব। বাংলায় কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এই kali puja 2020 - কালীপূজা 2020 হয়ে থাকে। ব্রহ্মযামল তন্ত্রমতে বঙ্গভূমির অধিষ্ঠাত্রী দেবীই এই মা কালী বহু প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন নামে বিভিন্নরূপে মাকালী পূজিতা হয়ে থাকেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে বিশেষকরে কলকাতায় কালীপূজার প্রভাব এতবেশি যে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের  মানুষ কালী কোলকাতাওয়ালী বলেও সম্বোধন করে থাকে। বাঙালি সমাজে আরো দুটি কালীপূজার প্রচলন আছে।  মাঘমাসের চতুর্দশী তিথিতে একটি কালীপূজা হয়ে থাকে তাকে বলে রটন্তী কালীপূজা এবং জৈষ্ঠ মাসের ফল হারিণী কালীপূজা ও খুবই জনপ্রিয়।
                                         

 মা কালীর সৃষ্টি :

                               অসুরদের অত্যাচারে দেবতাগণ স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে ব্রহ্মা ,বিষ্ণু ,মহেশ্বরের শরণাপন্ন হন।দেবতাদের প্রতি অত্যাচারের করুন কাহিনী শুনে ত্রিদেব ও অনন্য দেবতাগণ ক্রুদ্ধ হন। তাদের শরির থেকে এক মহাতেজ রশ্মি নির্গত হয়ে সৃষ্টি হয় দশভুজা দেবী দুর্গার। সেই মহাতেজশালী দেবীকে সকল দেবতাগণ স্বীয় অস্ত্র প্রদান করেন। দেবী সহস্র অসুর নিধন করিলেন বটে কিন্তু অসুর সেনাপতি রক্তবীজকে কোনোমতেই নিধন করতে পারলেন না। কারণ ব্রহ্মার বরে রক্তবীজের একবিন্দু রক্ত ভূমি স্পর্শ করলেই সমরূপের ও সমশক্তিশালী নব রক্তবীজের সৃষ্টি হয়ে দেবীর সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হচ্ছিল। রক্তবীজের এই পুনর্জন্ম , দেবী কোনো মতেই বন্ধ করতে পারছিলেন না।  ধীরে ধীরে, দেবী দশভুজা এটি ক্রোধান্বিত হয়ে উঠলেন। তার ত্রিনেত্র হতে এক মহাজ্যোতি নির্গত হতে লাগল।

মা কালীর সৃষ্টি

                           সেই জ্যোতি থেকে চতুর্ভুজা ,দিগম্বরা ,কার্লবাদান, শ্যামাঙ্গী ,ভয়ঙ্করী এক নারী মূর্ত্তির সৃষ্টি হল। এই নারী মূর্ত্তিই হল দেবী কালিকা।  ভয়ঙ্করী,সংহার রূপিণী সেই দেবী কালিকা শত সহস্র অসুর নিধন করতে লাগলেন।অবশেষে রক্তবীজকে মহাশূন্যে তুলে বধ করেন। রক্তবীজের দেহের সমস্ত রক্ত পান করে, রক্ত শূন্য করা দেহ ভূমিতে নিক্ষ্যেপ করলেন। নিহত অসুরদের মুন্ড দিয়ে দেবী মুণ্ডমালা গলে ধারণ করলেন এবং তাদের হাত দিয়া কটি দেশে বসন পরিহিতা হলেন। রক্তবীজ নিধনের আনন্দে অট্টহাস্য সাকারে উদ্দাম নৃত্য করতে লাগলেন। তার সেই নৃত্যে স্বর্গ ,মর্ত্য ,পাতাল কাঁপতে থাকল। দেবীর সেই নৃত্য বন্ধ করার জন্যে দেবতারা সকল প্রকার প্রয়াস করলেন। কিন্তু তাদের সকল প্রয়াস ব্যর্থ হল। অবশেষে সকল দেবতা মিলে দেবাদিদেব মহাদেবের শরণ নিলেন। দেবতাদের নিকট দেবীর উদ্দাম নৃত্যের কাহিনী শুনে বিচলিত হয়ে উঠলেন। উপায়ান্তর  না পেয়ে মহাদেব দেবীর নৃত্য পথে শয়ন করে থাকলেন। দেবী নৃত্য করতে করতে মহাদেবের বুকের উপর পদসঞ্চার করেই ভূমিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। পদতলে পতি মহাদেবকে দর্শন করেই জিভ বার করেই কামড়ে ধরলেন। তাই আজও দেবী এই রূপেই পূজার্চনা ও আরাধিত হয়ে থাকেন।

kali puja 2020 -  কালীপূজা 2020

                     

কালী শব্দের অর্থ : 

                            "কাল" শব্দ থেকেই "কালী" শব্দের উৎপত্তি। কাল শব্দের অর্থ সময় আর একটি অর্থ হয় ধ্বংস বা সংহার। আবার ভগবান শিবকে ও বৈদিক গ্রন্থে মহাকাল নামে অভিহিত করা হয়। তাই মহাকালের পত্নী হিসাবে কালী নামের উৎপত্তি। আবার কাল বা ধ্বংসকে যিনি সংহার করে নব সৃষ্টির নব চেতনার যোৱাকাশঃ করেন তিনিই কালী আবার কাল ,সময় কে যিনি হরণ কারণ তিনিই কালী। এই নামের মধ্যেই মায়ের মহিমা লুকিয়ে আছে।

মাকালীর বিভিন্ন রূপ :

                         বাংলায়(পশ্চিমবঙ্গ) মা কালী নানা নামে পূজিতা হন দক্ষিনাকালী ,বামাকালী ,শ্বাশানকালী ,রক্ষাকালী ,শ্যামাকালী ,গুহ্যকালী ,মহাকালী ,ভদ্রকালী ,চামুণ্ডাকালী ,শ্রীকালী  ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে প্রধান আটটি রূপকে বলা হয় অষ্টধা বা অষ্টবিধ। তন্ত্রমতে দশমহাবিদ্যার মধ্যে কালী প্রথম ও প্রধান। তবে তান্ত্রিক সাধকরা যে কালিমায়ের আরাধনা করেন তিনি বসন পরিহিতা ,দয়াশীলা মাতৃরূপিণী মায়ের এই রূপকে ভাবময়ী রূপ বলা হয়। আবার সাধারনের মধ্যে মায়ের যে রূপের পূজার্চনা হয় তা হল মায়ের তত্বময়ী রূপ।
মা কালীর দিগম্বরী রূপের মধ্যে নিহিত রয়েছে এক গভীর তত্ব। মা সর্বব্যাপী ,সর্ববৃহৎ ,বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আকৃতিই মায়ের আকৃতি এই বিশাল আকৃতি যা জীব জগতের কল্পনার অতীত তাকে বস্ত্র বা অন্য কিছু দিয়ে আচ্ছাদন করা অসম্ভব। এই সকল আচ্ছাদন ত্যাগ করলে তবেই মায়ের মাতৃত্বের উপলব্ধি সম্ভব। দিগম্বরা মা কালো এসবেরই প্রতীক।

 মাকালীর অঙ্গের বর্ণনা :                           

                                   মায়ের গলায় মুণ্ডমালা জ্ঞানের ভান্ডার। মা সেই জ্ঞানের ভান্ডারকে গলে ধারণ করে আছে। মায়ের হাতে ও আছে একটি মুন্ড। অর্থাৎ জ্ঞান প্রদানের জন্য তিনি সর্বদাই হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। শুধু উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করে জীবের কাজ। জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করার ইঙ্গিত বাহন করছে এই মুন্ড মালা।মায়ের কটিদেশ কাটা হাত দ্বারা আচ্ছাদিত। হাত কর্মের প্রতীক ,কটি বন্ধ কাটা হাত সকাম কর্ম পরিত্যাগ করে নিষ্কাম কর্মে প্রবৃত্ত হওয়ার প্রেরণা দেয়। নিষ্কাম কর্মা বিনা মায়ের স্বরূপ উপলব্ধি হয় না।

                              মা চতুর্ভুজা। এক হাতে সকামী ,ঐহীকে সুখ কামিদের বরাভয় প্রদান করেছেন। এক হাতে খড়্গ নিয়ে মুক্তি কামিদের মোহপাশ ছিন্ন করতে বলছেন। অন্য হাতে কালো কেশ আকর্ষণ করে তমোগুণকে নাশ করেছেন। আর একহাতে রজোগুণের প্রতীক রুধির ধারা পান করে সত্ত্বগুনে উন্নীত হতে বলেছেন।মায়ের গাত্র বর্ণ কালো আবার মা ব্রহ্মময়ী ,মা আদ্যাশক্তি। যখন আকাশ ,বাতাস ,পৃথিবী ,গ্রহ ,নক্ষত্র ,সূর্য ,চন্দ্র ছিল না তখন ছিল এই তমসাচ্ছন্ন ব্রহ্মময়ী মা কালিকা। অন্ধকার মানে কালো। বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে যে অন্ধকারাছন্ন অবস্থাই ব্রহ্মময়ী মায়ের প্রকৃত বর্ন। ঐ অবস্থা থেকে মা ই তো এই জগৎ প্রপক্ষের সৃষ্টি করেছেন। তাই মায়ের বর্ন কালো।

kali puja 2020 -  কালীপূজা 2020

                               মা সংহার মূর্তিতে বিরাজমান। মা মহাকাল কে ধ্বংস করে সৃষ্টিকে রক্ষা করেন। জগৎ কালের অধীন জগৎ কালের অধীন কালের ও নিয়ন্তা আছেন। তিনিই মাকালী কাল কে গ্রাস করেন বলেই তার মূর্তি সংহার মূর্তি। যাই হোক মাকালী কৃপাময়ী দয়াময়ী করুণাময়ী ,জগতের মঙ্গলের জন্যই আমরা
মায়ের আরাধনায়(কালীপূজা) ব্রতী হই।

কালীপূজা তিথি :

Saturday, 14 November
Kali Puja 2020 - কালীপূজা 2020

 



                              " সর্বে সুখিনঃ ভবন্তু ,সর্বে সন্তু নিরাময়া
                                           সর্বে ভদ্রানী পশ্যন্তু মা ,কশ্বিদ দুঃখ ভাগ ভবেৎ   ।।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ