paramatma shree krishna jibatma - পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ - জীবাত্মা


paramatma shree krishna - jibatma - পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ - জীবাত্মা

paramatma krishna - jibatma
পরমাত্মা - জীবাত্মা

paramatma shree krishna jibatma - পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ - জীবাত্মা :  সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি ভগবদ প্রেম ,ভগবদ বিশ্বাস ,ভগবাদ ভাব, প্রাপ্তির আকাঙ্খায় সাধন ,ভজন ও ধর্মীয় ক্রিয়া কর্ম সনাতনীরা বিশ্বাস করে যে সকল জীবই ভগবান বা পরমাত্মার অংশাতিঅংশ। প্রত্যেক জীবর মধ্যেই আত্মা বিদ্যমান। আত্মা পরমাত্মার অংশবিশেষ। আত্মার মধ্যে পরমাত্মার সকল ভাব ও শক্তি বিদ্যমান। তাই আত্মা সবচেয়ে ক্ষুদ্র কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী বস্তু। স্ফুলিঙ্গ যেমন অগ্নি থেকে উৎপন্ন হয় কিন্তু অগ্নি নয় অথচ তার মধ্যে অগ্নির সকল বৈশিষ্ঠ বিদ্যমান থাকে। স্ফুলিঙ্গ উপযুক্ত ক্ষেত্র পেলে পুনরায় অগ্নিকুন্ড সৃষ্টি করতে পারে। তেমনি সাধন ভজন ভক্তির মাধ্যমে উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করতে পারলে আত্মা ধারণ কারি জীবও ভগদ্ভাব প্রাপ্ত হয়।
   

এখন প্রশ্ন হল ভগদ্ভাব কি ? :  

 সচ্চিদানন্দ ভাব হল ভগদ্ভাব। অর্থাৎ সৎ ,চিৎ ও আনন্দ এই তিনটি হল ভগদ্ভাব। জগতে যাহা সত্য ও নিত্য তাহাই সৎ ভাব।  ভগবানের সৎভাবে প্রকাশিত হওয়ার জন্য যে শক্তি ক্রিয়া করে তার নাম সন্ধিনী শক্তি।জগৎ সৃষ্টি ,কর্মপ্রবাহ, কর্ম প্রবৃত্তির মুলে যে শক্তি ক্রিয়া করে তাই সন্ধিনী শক্তি।


                                                       "যয়া অস্তি ভাবয়তি করোতি কারয়তি চ "
                                                           The principle of creative life

সন্ধিনী শক্তি:

সন্ধিনী শক্তির নিম্নতম নাম কর্মশক্তি।এই শক্তির জন্যই ভগবান সততই সত্য ও নিত্য কর্মে নিয়োজিত।এই শক্তির ফল হয় প্রতাপ বা power . জীবের মধ্যেও যার যত বেশি কর্মশক্তি ক্রিয়া করে সে তত বেশি প্রতাপবান হন।

paramatma krishna - jibatma
সন্ধিনী শক্তি


সংবিৎ শক্তি:

 চিৎ ভাবে ভগবান সততই নিজে চেতন থাকেন ও জীবজগৎকে চেতনা ,জ্ঞান , বুদ্ধির প্রেরণা দেন। ইহার মুলে যে  শক্তি ক্রিয়া করে তার নাম সংবিৎ শক্তি।
               
                                                     " যায় বেত্তি বেদয়তী চ,'
                                                               যেন চেতয়তে বিশ্বং' 'ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ "
                                              "the princepal of knoledge"
 
      সংবিৎ শক্তির নিম্নতম নাম জ্ঞানশক্তি। ইহার ফল প্রকাশিত হয় প্রজ্ঞায় বা জ্ঞান বত্তায় ।
              আনন্দ ভাবে ভগবান নিজে আনন্দমময় থাকেন ও স্বরূপ আনন্দ জগৎকে প্রদান করেন।"যয়া হ্লাদতে ,হ্লাদয়তি চ " (the principal of delight) . আনন্দভাবে যে শক্তি ক্রিয়া করে তাকে বলা হয় হ্লাদিনী শক্তি। হ্লাদিনী শক্তির নিম্নতম নাম ইচ্ছাশক্তি। এই শক্তির ফল প্রকাশ পায় প্রেমে বা ভালোবাসায়। অর্থাৎ ইচ্ছাশক্তির ফল প্রেম (love), ইহাই সাচ্চিদানন্দ তত্ব।
                   সাচ্চিদানন্দ এর ভাব ও শক্তি জীব কিভাবে লাভ করতে পারে তা জীবতত্ব বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। জীব ব্রহ্মের অংশ পূর্বে বলা হয়েছে (মমৈবাংশো জীব ভুতাঃ )। তাই জীবের মধ্যেও ব্রহ্মের লক্ষ্মণ থাকবেই। যেমন স্ফুলিঙ্গের মধ্যে অগ্নির লক্ষ্মণ থাকে।"সত্যং জ্ঞানমনন্তথ্ঞেত্যস্তীহ ব্রহ্মলক্ষানম"  জীবের মধ্যে উহা অস্ফুট ,বীজবস্হ  ,অবিশুদ্ধ , কিন্তু ব্রহ্মের মধ্যে উহা পূর্ণপ্রকাশিত ও পূর্ণ উদ্ভাসিত। জীব একাধারে কর্ত্তা ,জ্ঞাতা , ও ভোক্তা। কর্মশক্তির ক্রিয়ায় জীব কর্ত্তা, কর্মশক্তির বিকাশ ঘটে চেষ্টায়।  পাশ্চাত্য বিজ্ঞান একেই বলে conatus ।জ্ঞান শক্তির প্রভাবে জীব জ্ঞাতা। জ্ঞান শক্তির বিকাশ ঘটে ভাবনায়।পাশ্চাত্য বিজ্ঞান একে বলে cognition । ইচ্ছাশক্তির প্রভাবে জীব ভোক্তা , ইচ্ছাশক্তির বিকাশ ঘটে কামনায়। পাশ্চাত্য বিজ্ঞান একেই বলে emotion । সাধারণ কথায় এদের একসঙ্গে বলা হয় action, thought, desire . এগুলি বৈজ্ঞানিক সত্য ও স্বানুভবসিদ্ধ।  জীবের মধ্যে যে কর্মশক্তি উহা উচ্চতম নামে সন্ধিনী, যাহার ফল প্রতাপ (power) . জীবের মধ্যে যে জ্ঞান শক্তি  উহা উচ্চতম নামে সংবিৎ, যাহার ফল প্রজ্ঞা  (wisdom) . জীবের মধ্যে যে ইচ্ছাশক্তি উচ্চতম নামে তাহাই হ্লাদিনী, যাহার ফল প্রেম (love) .
                    সৎ , চিৎ , ও আনন্দ -- কর্ম, জ্ঞান ও ইচ্ছা (life, delight,love) এই তিনটি , জীবের মধ্যে অস্ফুট , অপূর্ণ ,প্রকৃতি জড়িত অবিশুদ্ধ ও সুপ্ত অবস্থায় থাকে।  সাধন বলে এই তিনটি শক্তি বিশুদ্ধ ও ঈশ্বর মুখী হইয়া পূর্ণ বিকাশপ্রাপ্ত হইলেই জীবও ঐশ্বরিক প্রকৃতি বা ভাগদ্ভাব প্রাপ্ত হয়।
                               জীবের অন্তর্নিহিত এই যে শক্তি আছে সেই অনুসারে সাধন প্রণালী ও তিন প্রকার।যেমন কর্মযোগ ,জ্ঞানযোগ ,ভক্তিযোগ। জীবের মধ্যে যে সৎ ভাব তাহার প্রকাশ জীবের কর্মে। সুতরাং জীবের কর্ম ঈশ্বরমুখী হইয়া বিশুদ্ধ হইলেই নিষ্কাম কর্মযোগ হয়। জীবের যে চিৎ ভাব উহার প্রকাশ তাহার জ্ঞানে ও ভাবনায়।  জীবের ভাবনা ঈশ্বরমুখী হইয়া সমত্ব ভাব প্রাপ্ত হইলেই হয় জ্ঞান যোগ।  জীবের মধ্যে যে আনন্দ ভাব উহার প্রকাশ তাহার কামনায়। কামনা ঈশ্বর হইয়া বিশুদ্ধ হইলেই প্রেমভক্তি যোগ হয়। এই তিনটি যুগপৎ অনুষ্ঠানই জীবের পূর্ণ বিকাশ ,সাচ্চিদানন্দের সাধর্ম্যলাভ ( মম সাধর্ম্যমাগতাঃ) ও জীবের ভাগদ্ভাব প্রাপ্তি হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব , শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু  কর্মযোগ , জ্ঞানযোগ , ও ভক্তিযোগ আত্মস্থ করেই ভাগদ্ভাব প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাই তো তারা জীবের কামনার ধন , ভগবান হিসেবে পূজিত হন। স্বামী বিবেকানন্দ কর্মযোগ আত্মস্থ করে কর্মকেই ঈশ্বর মুখি করেছিলেন।  শিব জ্ঞানে জীব সেবা অর্থাৎ জীব সেবা কেই ভগবদ সেবা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাই তিনি জীবের কাছে মহামানব হিসাবে জীবের পরমপূজ্য। নিষ্কাম ঈস্বরমুখী কর্ম সকল জীবে ঈশ্বর দর্শনে সমত্ব ভাব , সকল কামনা ঈশ্বর মুখী করিয়া জন্ম মৃত্যুর চক্র হইতে মুক্ত হওয়ার সাধনার পথে অগ্রসর হই। 

               
                                                  "  ওঁ নমঃ ভগবতে বাসুদেবায়ঃ " 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ