geeta
" ভীম বা ভৈমী " একাদশী - vim / vaimi akadashi
" ভীম বা ভৈমী " একাদশী - vim / vaimi akadashi :
একাদশী তিথি একটি চান্দ্রা তিথি। হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একাদশী তিথি একটি পবিত্র দিন। এই তিথিতে ব্রত উদযাপন করলে জীবন পবিত্র ও সুখকর হয়। প্রতি মাসে দুটি করে একাদশী আসে। একটি শুক্লা একাদশী ও অপরটি কৃষ্ণা একাদশী। তবে প্রতিটি একাদশীর আলাদা আলাদা নাম আছে বৈশাখ মাসের দুটি একাদশীর নাম "বরুথিনী" একাদশী ও অপরটি "মোহিনী" একাদশী। জৈষ্ঠ মাসের দুটি একাদশীর নাম "অপরা" ও "নির্জলা বা পাণ্ডবা" একাদশী। আষাঢ় মাসে আসে "যোগিনী" ও "শয়ন" একাদশী। শ্রাবনী একাদশীর নাম "কামিকা" ও "পুত্রদা বা পবিত্রা" একাদশী। ভাদ্র মাসে "অজা" ও "পদ্মা বা পরিবর্তনি" একাদশী। আশ্বিনের "ইন্দিরা" ও "পাশা কুঁশা" একাদশী।কার্তিক মাসে "রাম" ও "উত্থান" একাদশী। অগ্রহায়ণ মাসে "উৎপন্না" ও "মোক্ষদা" একাদশী। পৌষ মাসে "সফল" ও "পুত্রদা" একাদশী। মাঘ মাসের দুই একাদশী হল "ষটতিলা" ও "ভীম বা জয়া একাদশী"। ফাল্গুনের "জয়া" ও "আমলকি" একাদশী এবং চৈত্র মাসে হয় "পাপমোচনী" ও "কামদা" একাদশী। যাদের মধ্যে মাঘ মাসের শুক্ল একাদশী অর্থাৎ "ভীম একাদশী" খুবই পুন্য তিথি বলে গণ্য করা হয়। ধৰ্ম প্রাণ সনাতনীরা অতীব নিষ্ঠার সঙ্গে এই তিথিতে ব্রত উদযাপন করে থাকেন।
পুরান অনুসারে :
তবে বিভিন্ন পুরানে ভীম বা ভৈমী একাদশী সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত্ পাওয়া যায়। ভবিষ্যত্তর পুরানে মাঘী শুক্লপক্ষিয়া একাদশীকে বলা হয়েছে জয়া একাদশী। শ্রীগরুড় পুরানে এই শুক্লপক্ষিয়া একাদশী কেই ভীম বা ভৈমী একাদশী বলা হয়েছে। আবার পদ্মপুরানে জৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষিয়া একাদশী কে বলা হয় নির্জলা পাণ্ডবা একাদশী বা ভীম একাদশী। তবে সকল পুরান বা ধর্মশাস্ত্রেই জয়া একাদশী হোক বা নির্জলা পাণ্ডবা একাদশী কে খুবই গুরুত্ব পূর্ণ ও পুন্য দাত্রী বলেই বর্ণনা করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল জয়া একাদশী বা ভীম একাদশী কী , এর উৎপত্তি কিভাবে হল ?:
ভবিষ্যত্তর পুরান একদা দেবরাজ ইন্দ্র তার পারিজাত নন্দন কাননে গন্ধর্ভ ও অপ্সরাদের নৃত্যগীতে মগ্ন ছিলেন। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন নৃত্যগীতে কোথাও যেন তাল ভঙ্গ হচ্ছে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেন পুষ্পবন্তি নামে এক অপ্সরা ও মাল্যবান নামে এক গন্ধর্ব পরস্পরের দিকে কটাক্ষ হানছে ও পরস্পর কামাসক্ত হয়ে পড়েছে। তাই তাদের দ্বারাই নৃত্যগীতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। দেবরাজ ইন্দ্র তাদের তৎক্ষণাৎ পিশাচ যোনি প্রাপ্ত হওয়ার অভিশম্পাৎ করেন। পুষ্পবন্তি ও মাল্যবান পিশাচ যোনি প্রাপ্ত হয়ে মানের দুঃখে স্বর্গ ত্যাগ করে মর্ত্তের হিমালয়ের তুষারবৃত এক দুর্গম স্থানে বসবাস করতে থাকেন। ভাবতে থাকে যে পাপে এই দণ্ড হল এই ধরনের পাপ আর করবে না। দিন মাস বছরের পর বছর কেটে গেল , তারা তাদের আত্মপরিচয় প্রায় ভুলেই গেল। একদিন অতি ঠান্ডায় কাতর হয়ে নির্জলা অনাহারে ও অনিদ্রায় একটি বৃক্ষ মুলে বসে ভগবান কে ডাকতে ডাকতে রাত্রিযাপন করলেন নিশিশেষে স্নান সেরে ভগবানের সেবা দিয়া দেখেন যে তাদের পূর্ব রূপ ফিরে পেয়েছেন। তারা তখন আনন্দে ভগবানকে ডাকতে লাগলেন। ভগবান বিষ্ণু প্রকট হয়ে দৃশ্যমান হয়ে বলেন যে তোমরা তোমাদের অজান্তেই একাদশী তিথির ব্রত উদযাপন করেছ। সেই পুণ্য ফলে তোমাদের সকল পাপ দূরীভূত হয়েছে। তোমরা এখন স্বর্গে ফিরে যেতে পার। স্বর্গে দেবরাজ ইন্দ্র তাদের সকল কথা শুনে পুষ্পবন্তি ও মাল্যবান কে স্বামী ও স্ত্রী রূপে স্বর্গে থাকতে দিলেন। অতএব নিষ্ঠা সহকারে ভীম বা জয়া একাদশী পালন করলে দেবশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অন্য একটি কাহিনী থেকে জানা যায় যে পাণ্ডবজননী "কুন্তী" নিষ্ঠা সহকারে একাদশী ব্রত পালন করেন। একটি মাঘী শুক্লা একাদশীতে মাধ্যম পাণ্ডব ভীম, " হল " কাঁধে করে মাঠে যাচ্ছেন। এমন সময় দেখেন তার মা পুষ্করিণীর ঠান্ডা জলে স্নান করতে গিয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছেন। তখন তিনি হলের ফলাটি খুলে অগ্নিতে গরম করে পুষ্করিণীতে জলে নিক্ষেপ করলেন। তাতে পুষ্করিণীর জল উত্তপ্ত হয় ও কুন্তী দেবী একটু আরাম বোধ করলেন। কিন্তু জলের দেবতা বরুন দেব ফলার গরমে কষ্ট পেয়ে ছুটে গেলেন শ্রী কৃষ্ণের কাছে। সব কথা শুনে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বরুন দেবকে বললেন ভীম যদি একাদশী ব্রত পালন করে তবেই এই কষ্টের উপশম হবে। এই কথা শোনা মাত্র বরুন দেব ভীমের কাছে গেলেন ও সব কথা বললেন। ভীম, বরুন দেবের কথা শুনে একাদশী ব্রত অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন। বরুন দেবের তাপ দগ্ধ শরির শীতল হল।সেই থেকেই এই একাদশী ভীম একাদশী নামেও খ্যাত। নিষ্ঠা সহকারে এই একাদশী ব্রত পালন করলে ত্রিতাপ দহন জ্বালার উপশম হয়। সকল প্রকার দানের পুন্য লাভ হয় , সকল যজ্ঞ ও তীর্থের পুন্য লাভ হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ
please do not enter any spam link in the comment box.