শ্রীমদভগবদ গীতা ।ভক্ত ও ভগবদ সত্তা লাভ

শ্রীমদভগবদ গীতা ।ভক্ত ও ভগবদ সত্তা লাভ 

শ্রীমদভগবদ গীতা ।ভক্ত ও ভগবদ সত্তা লাভ


                                 সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ বিশ্বাস করে যে জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তির একমাত্র ভক্তির দ্বারাই সম্ভব। ভক্তির দ্বারা ভগবানের কৃপা লাভ ভিন্ন এই জড় জগতের মায়ার বাঁধন থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। তাহলে জ্ঞান মার্গ ,যোগাভ্যাসাদি অন্যান্য সকল সাধন মার্গ কি ভুল ? না ,অন্যান্য সকল মার্গ দ্বারাই ভগবৎ প্রাপ্তি সম্ভব। কিন্তু এই সকল মার্গ অত্যন্ত কঠিন।এই সকল সাধনা সম্পূর্ণ রূপে আত্মা স্বাতন্ত্র বলেই বা ক্ষমতায় করতে হয়। পদস্খলন হইলেই বা সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটিলেই সকল প্রায়শই ব্যর্থ হয়। নূন্যতম ফল পাওয়া যায় না। আবার আত্ম স্বাতন্ত্রতার জন্য অভিমান, অহংকার ইত্যাদি মনে উদার হইলেই বিপরীত ফল হইতে পারে।

                                 কিন্তু ভক্তি মার্গে বিধিনিষেধের কঠোরতা নাই। তাই বাধা বিঘ্নের আশঙ্কা কম। ভগবানের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া তাহার কৃপা প্রার্থনা করিতে হয়। অর্থাৎ নিজের ভালোমন্দ সুখ, দুঃখ, ব্যাথা , বেদনা, লাভ, অলাভ ,সিদ্ধি, অসিদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে ভক্তর বা সাধকের কোন চিন্তা থাকেনা। ভগবানকে বকলমা দিতে হয়।

শ্রীমদ ভগবদ গীতায় দ্বাদশ অধ্যায় ১৩ থেকে ১৯ নং শ্লোকে ভক্তের লক্ষণ সুচারু ও সুন্দর ভাবে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন।

অদ্বেষ্টা সর্বভূতানাং মৈএ: করুন এবচ
নির্ম্মমো নিরহংকারঃ সমদুঃখসুখ ক্ষমি। ....১৩
.......
.......
তুল্য নিন্দ্বাস্ত্ততি তিরমোনী সন্ত্তষ্টো যেন কেনচিৎ।
অনিকেত: স্থিরমতির্ভত্তিমান মে প্রিয় নরঃ।




সস্তাদামে গীতা কেনার জন্য উপরের লিংকে ক্লিক করুন 
                           
  অর্থাৎ যিনি . কাহাকেও দ্বেষ করেন না ,.সকলের প্রতি মিত্র ভাবাপন্ন, . দয়াবান,.সমত্ব বুদ্ধি সম্পন্ন,. অহংকার বর্জিত ,. সুখে দুঃখে সমভাবাপন্ন, . সদাসন্ত্তষ্ট, . সংযত স্বভাব, ৯. দৃঢ় বিশ্বাসী, ১০. ম্যান ও বুদ্ধি ভগবানের কাছে সমর্পন করিয়াছেন, ১১. কোনো প্রাণী হইতে উদ্বেগ পান না, ১২. কোনো প্রাণীকে উত্যক্ত করেন না, ১৩. হর্ষ, অমর্ষ, ভয় ও উদ্বেগ হইতে মুক্ত, ১৪. নিষ্পৃহ বা ষ্পৃহাহীন, ১৫. শৌচ সম্পন্ন বা পবিত্র, ১৬. কর্তব্য কর্মে দক্ষ বা আনলাম, ১৭. উদাসীন বা পক্ষপাতহীন, ১৮. মনঃপীড়া শূন্য, ১৯. সকাম কর্মাপুষ্ঠানে উদ্যমহীন বা করেন না, ২০. ইষ্টলাভে হৃষ্ট হন না বা অলাভে দ্বেষ করেন না, ২১. অপ্রাপ্য বস্তু লাভের আকাঙ্ক্ষা করেন না, ২২. কোনো বিষয়ে শোক করেন না, ২৩. পুণ্যের লোভে বা পেপার ভয়ে কোনো কর্ম করেন না, ২৪. শত্রু মিত্রে সমভাবাপন্ন, ২৫. মানে ও অপমানে সমভাবাপন্ন, ২৬. শীত, উষ্ণ, সুখ, দুঃখে সমভাবাপন্ন, ২৭. নিন্দা ও স্থিতিতে সমজ্ঞান, ২৮. সমস্ত বিষয়ে আসক্ত বর্জিত, ২৯. সংযত বাক, ৩০. যদৃচ্ছা লাভে সন্তুষ্ট বা যা পায় তাতে সন্তুষ্ট, ৩১. গৃহাদিতে সমত্ব বুদ্ধি বর্জিত, ৩২. স্থির চিত্ত। যে জীবের মধ্যে এই সকল বৈশিষ্ট সমাহিত হয়েছে তিনিই ভক্ত।

                              কিন্তু সাংসারিক দৃষ্টিতে এই বৈশিষ্ঠ গুলি কি জীবের মধ্যে সমাহিত হওয়া বা অর্জন করা সম্ভব ?আধ্যাত্মিক তত্বের পরম্পরা অনুযায়ী যদি দেখা যায় তাহলে অসম্ভব নয়। মানুষ ভিন্ন অন্য জীবের হৃদয় বিচার করা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। তবে যদি মানুষ ভক্ত হওয়ার জন্য হৃদয়ে ভক্তি সঞ্চারের প্রয়াস করে তবে অসম্ভব নয় বরং সহজ।

শ্রীমদভগবদ গীতা ।ভক্ত ও ভগবদ সত্তা লাভ

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন আমাতে চিত্ত সমাহিত কর। যদি না পার আরো অভ্যাস যোগ অবলম্বন কর। বিক্ষিপ্ত চিত্তকে পুনঃ পুনঃ প্রত্যাহার পূর্বক ভগবানে নিবিষ্ট করার প্রয়াস বা অভ্যাস কে বলা  অভ্যাস যোগ। যদি অভ্যাস যোগে অসমর্থ হও তবে ভগবানের প্রীতির জন্য কর্ম কর তবে সিদ্ধি লাভ হবে।


সস্তাদামে গীতা কেনার জন্য উপরের লিংকে ক্লিক করুন 

                       
    ভক্তি শাস্ত্রে নবকর্মা বিধা ভক্তি উৎপাদক বা ভগবদ প্রীতির কর্ম উল্লেখ আছে। শ্রবন, কীর্তন, শরণ পদসেবা অর্চ্চনা বন্দনা দাস্য সখ্য ও আত্ম নিবেদন , যিনি এই সকল কর্মা করেন তাকে ভগবৎ পরায়ণ বলা হয়। অর্থাৎ ভগবদ কর্মকারক। ভক্ত হওয়ার লক্ষে তিনি কর্ম করেন। এই সকল কর্মকে ভক্তির জনক বলা যেতে পারে। ইহাতে যদি অসমর্থ হও তবে সকল কর্ম ভগবানে অর্পণ রূপ যোগ আশ্রয় করিয়া সংযতাত্মা হইয়া সকল কর্মফল ত্যাগ কর। তবেই ভক্ত হয়ে ভগবদ প্রাপ্তির দ্বারা সিদ্ধি লাভ হবে।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ 
ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে বাসুদেবায় 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ