what is hare krishna mantra

হরে কৃষ্ণ হরে রাম মহামন্ত্রের তাৎপর্য ও মাহাত্ম 

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের তাৎপর্য ও মাহাত্ম

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ করে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে এই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র একমাত্র মুক্তির পথ। জন্ম-মৃত্যু চক্রের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে ভগবানের কাছে বিলীন হওয়ার একমাত্র পথ এই মহামন্ত্রের কীর্তন করা। মন্ত্র শব্দের আধ্যাত্মিক অর্থ হল যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি মনকে কলুষমুক্ত করে, আনন্দে পরিপূর্ণ করে। এই হরেকৃষ্ণ নাম শুধু মন্ত্র নয় মহামন্ত্র। কারণ এই মহামন্ত্র যে বা যারা কীর্তন করে এবং যাদের কর্ণগোচর হয় সকলের হৃদয় কলুষমুক্ত হয় ও আনন্দে পরিপূর্ণ হয়। তাইতো কলির জীবের হরিনাম ছাড়া মুক্তির অন্য গতি নেই।


নামরূপেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতার হয়ে এসেছেন। এই নামের দ্বারাই জগত সংসার মুক্তি লাভ করবে। তিনটি নাম নিয়ে এই মহামন্ত্র সৃষ্টি হরে, কৃষ্ণ,ও রাম। হরি শব্দের সম্বোধনে হয়েছে হরে অর্থাৎ ভগবান শ্রী হরি, কৃষ্ণ অর্থাৎ লীলা অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, রাম অর্থাৎ পুরুষোত্তম ভগবান শ্রী রাম। এই মহামন্ত্রের কীর্তনের মধ্য দিয়ে ভগবানের তিনটি সাকার ও সগুন বিভূতির পুনঃ পুনঃ জপ ও আরাধনা করলে চিন্তা ও চেতনার উন্মেষ ঘটে। ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিকতার বিকাশ ঘটে। ত্রিতাপ জ্বালা থেকে মুক্তি লাভ হয়।

  আবার হরে শব্দটির অর্থ হরণ করা।জগতের সকল দুঃখ যন্ত্রণা ভালো-মন্দ অন্তরের সকল কামনা বাসনা পূরণ করো অর্থাৎ হরে ভগবানের অন্তরঙ্গা শক্তি। কৃষ্ণ শব্দ সর্বাকর্ষক ,যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছুকে আকর্ষণ করে। রাম শব্দে মনোরম বা মঙ্গলময় ,মনহরন। এই মহামন্ত্র কীর্তন এর মধ্য দিয়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানানো হয়, যে হে ভগবান তোমার কাছে পৌঁছানোর  আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই, তুমি আমাদের সকল কামনা-বাসনা কে হরণ করো, হৃদয়ভূমিকে আকর্ষণ করে জীব জগতের মঙ্গল করো। ভগবানের কাছে আকুল আকুতি আমাদের ভালো নাও, সুখ নাও, দুঃখ নাও, শুধু তোমাকে আমাকে দাও। তোমার কৃপা ভিন্ন আমাদের গতি নাই।

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের তাৎপর্য ও মাহাত্ম

জীবের নিকট ভগবান, সচ্চিদানন্দ ভাবে প্রকাশিত হয় অর্থাৎ ভগবান সৎ ,চিৎ ও আনন্দভাবে প্রকাশিত হয়। আবার এই তিন ভাব প্রকাশিত হওয়ার জন্য তিনটি অন্তরঙ্গা শক্তি ক্রিয়া করে সন্ধিনী , সংবিৎ ও হ্লাদিনী বা কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তি। হরে, কৃষ্ণ, রাম এই তিনটি নামের মধ্যে ভগবানের সৎ, চিৎ ও আনন্দভাব এবং তাদের অন্তরঙ্গা শক্তি সন্ধিনী , সংবিৎ ও হ্লাদিনী বা কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তি সমাহিত হয়ে আছে। এই মহামন্ত্র কীর্তন এর মধ্য দিয়ে ওই শক্তি বা ভাবের বিকাশ ঘটে। জীব ধীরে ধীরে ভগবৎ সত্তা প্রাপ্তির দিকে বা মুক্তির দিকে এগিয়ে যায়.


বৈষ্ণব পদকর্তাগন ও সাধকগণ হরেকৃষ্ণ মহানাম এর মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীমতি রাধারাণীর ষোলো সখা ও ষোলো সখীর নামের বর্ণনা করেছে। এই মহানাম কীর্তন এর মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের সখা ও শ্রীমতি রাধারাণীর সখীদের মতোই ভগবৎ প্রেম অনুভব করেন। আটটি "হরে" , চারটি "কৃষ্ণ" ,চারটি "রাম" নাম নিয়ে এই মহামন্ত্র গঠিত। 


আটটি "হরে" শব্দের তাৎপর্য :

                                        ১. চন্দ্রাবলী 
                                       ২. প্রেমময়ী শ্রীমতি রাধারানী 
                                       ৩. সুভাষিণী 
                                       ৪. সিংহাসন 
                                       ৫. সুদর্শন 
                                       ৬. শেষ দেব 
                                       ৭. সাবিত্রী 
                                       ৮. রেবতী 

চারটি "রাম" শব্দের তাৎপর্য :

                                         ১. শ্রী রাধিকা 
                                       ২. লক্ষ্মী 
                                       ৩. সরস্বতী 
                                       ৪. সুভদ্রা 

চারটি কৃষ্ণ শব্দের তাৎপর্য :

                                         ১. পরম ব্রহ্ম শ্রী গোবিন্দ 
                                        ২. বাসুদেব 
                                       ৩. জগন্নাথ 
                                       ৪. বলভদ্র 

বৈষ্ণব সাধকদের ভাবনায় বত্রিশ অক্ষরের প্রতিটি অক্ষরে সখা ও সখীদের নাম ও তাদের অবস্থান কাব্যিক ছন্দে বর্ণিত হয়েছে। 

১." হ " অক্ষরে শ্রীললিতা সখি রয় মস্তকেতে 
২. " রে " অক্ষরে শ্রী বিশাখা রয় দক্ষিণ বাহুতে 
৩." কৃ " অক্ষরে চম্পকলতা সখি কন্ঠে রয় 
৪." ষ্ণ " অক্ষরে চিত্রা সখি বাহুতে শোভয় 
৫." হ " অক্ষরে রঙ্গদেবী সখি থাকে হাতে 
৬." রে " অক্ষরে সুদেবী যে থাকয়ে পৃষ্ঠেতে 
৭. " কৃ " অক্ষরে তুঙ্গ বিদ্যা বদন উপরে 
৮. " ষ্ণ "অক্ষরে  ইন্দুরেখা শ্রবণ বিবরে 
৯. " কৃ " অক্ষরে শশিরেখা বয় ভুরু যুগে 
১০." ষ্ণ " অক্ষরে বিমলা সখি ভ্রুর ডান ভাগে 
১১. " কৃ " অক্ষরে পালিকা সখি ভ্রূর বামে রয় 
১২. " ষ্ণ " অক্ষরে লবঙ্গ মঞ্জুরি থাকয়ে হৃদয় 
১৩. " হ " অক্ষরে শ্যামলা সখি নাভিতে থাকয় 
১৪." রে " অক্ষরে মধুমতি নাভি মধ্যে রয় 
১৫. " হ " অক্ষরে ধন্যাসখী করাঙ্গুলি রয় 
১৬." রে " অক্ষরে মঙ্গলা কর অধোমুখী হয় 
১৭." হ " অক্ষরে শ্রীদাম সখা জঙ্ঘায় থাকয় 
১৮." রে " অক্ষরে সুদাম সখা জানুতে নিবসয় 
১৯." রা " অক্ষরে বসুদাম সখা থাকে ভুরু অঙ্গে 
২০." ম " অক্ষরে অর্জুন সখা সদা থাকে লিঙ্গে 
২১." হ " অক্ষরে সুবল সখা দক্ষিণ পদতে 
২২."রে " অক্ষরে কিঙ্কিণী সখা আছয়ে বামেতে 
২৩."রা " অক্ষরে চাতক সখা পূর্বে নিবসয় 
২৪." ম " অক্ষরে মধুমঙ্গল অগ্নিকোনে রয় 
২৫."রা " অক্ষরে শুক সখা থাকয়ে দক্ষিণে 
২৬."ম " অক্ষরে বিশাল সখা বয় নৈঋত কোনে 
২৭."রা " অক্ষরে মহাবল সখা পশ্চিমে থাকয়ে 
২৮."ম " অক্ষরে বৃষভ সখা বায়ু কোনে রয় 
২৯." হ " অক্ষরে দেবপ্রস্থ সখা উত্তরেতে 
৩০."রে " অক্ষরে উদ্ভব সখা আছে ঈশাণেতে 
৩১." হ " অক্ষরে মহাবাহু উর্দ্ধে রয় সুখে 
৩২."রে " অক্ষরে ঈশান সখা আছে অধোমুখে 

তাত্বিক ভাবে বা ভক্তি ভাবে যে যেভাবেই এই মহানাম কীর্ত্তন করুন না কেন লক্ষ কিন্তু সেই একটাই ভাগবাৎ প্রাপ্তি ও মুক্তি। আসুন সবাই এই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রে কীর্তনের মাধ্যমে ভগবানের কৃপা প্রার্থনা করি। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ